চলতি সপ্তাহেই বাংলাদেশের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমঝোতায় পৌঁছানোর আশা প্রকাশ করেছেন মিয়ানমারের ডিফ্যাক্টো সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সুচি।
মঙ্গলবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে একথা জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে আসেম সম্মেলন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা বলেন সু চি।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে বুধ-বৃহস্পতিবার বাংলাদেশি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন মিয়ানমার কর্মকর্তারা। সেখানেই ঠিক করা হবে দেশে ফিরতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের কিভাবে ফিরিয়ে আনা হবে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার পর রোহিঙ্গাদের ওপর নিধনযজ্ঞ শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা ও ধর্ষণ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করেছে।
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে শোনা গেছে সেনাসদস্যদের বর্বরতার কথা। কিভাবে তাদের বাড়িতে আগুন দিয়ে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এই হত্যাযজ্ঞের জন্য সেনাবাহিনীকেই দায়ী করেছে। তবে বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে সেনা কর্তৃপক্ষ।
সু চি বলেন,‘আমরা বলতে পারছি না, কিছু হয়েছে কিনা। তবে সরকারের দায়িত্ব হিসেবে আমরা নিশ্চিত করতে চাই যেন এমন কিছু না হয়।’
দেশে ফিরতে চাওয়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি খুব শিগগিরই বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করবো আমরা। এতে করে যারা ফিরে আসতে চায় তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবো আমরা।’
এবারও কথা বলার সময় ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি সু চি। মিয়ানমার তাদের বাঙালি বলেই অভিহিত করার চেষ্টা করে। যুগ যুগ ধরেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার। জাতিসংঘও তাদের সবচেয়ে নিপীড়ত জনগোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করেছে। সু চির হাত ধরে সামরিক শাসন থেকে মিয়ানমার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আসলেও রোহিঙ্গাদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি খুব একটা।
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ১৯৯০ সালের চুক্তি অনুসনরণ করা হবে বলে জানান সু চি। সেসময়ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিলো অনেক রোহিঙ্গা।
তবে সেই চুক্তিতেও মিয়ানমারের নাগরিকত্বের কথা বলা হয়নি। যুগ যুগ ধরে মিয়ানমারে বসবাস করলেও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে দেশটির সরকার। ফলে প্রায়ই রোহিঙ্গাদের ওপর চড়াও হতে পেরেছে সেনাবাহিনী।
সু চি বলেন, আমরা তাদের বসবাসের অধিকারের ভিত্তিতে ফিরিয়ে নিতে চাই। এটি অনেক আগেই দুই সরকার মেনে নিয়েছি। আমরা এই নিয়মই অনুসরণ করতে চাই।
এর আগে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু মিয়ানমারের এক কর্মকর্তার অভিযোগ, বিদেশি ত্রাণ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশই প্রক্রিয়া দীর্ঘ করছে।
সু চি বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার চুক্তির কতটা কাছাকাছি রয়েছে তা বলা খুব কঠিন। তিনি দাবি করেন, ‘রাখাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্ভব সবকিছু করছে সরকার। তবে সেজন্য সময় প্রয়োজন।’
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা ফিরে গেলে কতটুকু নিরাপদ থাকবে সে বিষয়ে নিশ্চিত নন বিশ্লেষকরা। রাখাইনে এখনও হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। তাদের বেশিরভাগিই নারী ও শিশু।
এছাড়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে ‘মডেল ভিলেজ’ নামে নতুন এক শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় দেবে মিয়ানমার। তাদের নিজেদের জমি বা বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার কোনও প্রতিশ্রুতি দেয়নি তারা।
পাঠকের মতামত: